Wednesday, January 1, 2025
spot_img
Homeআন্তর্জাতিকফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধে নিহত ৯ হাজার ছাড়িয়েছে

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধে নিহত ৯ হাজার ছাড়িয়েছে

২২ দিন পেরিয়েছে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ। এতে করে নিহতের সংখ্যা বেড়ে চলছে। এ সময়ে উভয় পক্ষের মিলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ হাজার ছাড়িয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা শুরু করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এতে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের অন্তত ১৪০০ মানুষ নিহত হয়েছে। এ ছাড়া ২২৯ জনকে আটক করে জিম্মি করে রেখেছে হামাস। এ ছাড়া নিহতদের মধ্যে ৩১১ জন ইসরায়েলের সেনা রয়েছেন।

অন্যদিকে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিরামহীন বোমা বর্ষণে ফিলিস্তিনের ৭ হাজার ৭০৩ জন নাগরিক নিহত হয়েছেন।

ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রিয়াল অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ২২৯ ইসরায়েলিকে জিম্মি করেছে ফিলিস্তিন। তাদের মধ্যে দুই দফায় চার জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। জিম্মিদের মুক্তিতে দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্থতা করছে কাতার। এদিকে যুদ্ধের মধ্যে রাশিয়া সফরে গেছে হামাসের প্রতিনিধিদল। বৈঠকের বরাতে রুশ গণমাধ্যম জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দিদের মুক্তি নয়।

এদিকে গাজায় যুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে গত তিন সপ্তাহে অন্তত ২৯ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। নিহত এই সাংবাদিকদের মধ্যে ২৪ জন ফিলিস্তিনের, ৪ জন ইসরায়েলের এবং একজন লেবাননের নাগরিক। শনিবার এক বিবৃতিতে সাংবাদিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা মার্কিন প্রতিষ্ঠান কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) এ তথ্য জানিয়েছে।

অন্যদিকে ইসরায়েলের বিরামহীন বোমাবর্ষণে গাজা উপত্যকায় গত ২৪ ঘণ্টায় জাতিসংঘের অন্তত ১৪ জন কর্মী নিহত হয়েছেন। এই নিয়ে গত তিন সপ্তাহে গাজায় জাতিসংঘের অন্তত ৫৩ জন কর্মকর্তা ও কর্মী নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সহায়তাবিষয়ক সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ ওয়ার্ক এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজি (আনরোয়া) এ তথ্য জানিয়েছে।

আনরোয়ার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর গত ২১ দিনের বোমা বর্ষণে গাজায় ঘরবাড়ি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন অন্তত ১৪ লাখ ফিলিস্তিনি এবং তাদের মধ্যে প্রায় ৬ লাখ ৪০ হাজার উপত্যকার ১৫০টি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। এই শিবিরগুলো পরিচালনা করে আনরোয়া।

গাজায় মুঠোফোন ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ

ইসরায়েলি বোমা হামলার কারণে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইন্টারনেট ও মুঠোফোন সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় এসব সেবা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি টেলিকম প্রতিষ্ঠান। খবর আনাদোলুর।

ফিলিস্তিনি টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি এক বিবৃতিতে বলেছে, অধিকৃত পশ্চিম তীরের সঙ্গে সংযুক্ত লাইন ও টাওয়ার তীব্র ইসরায়েলি বোমা হামলার কারণে গাজায় ল্যান্ডলাইন, বেতার ও ইন্টারনেট সেবা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। পশ্চিম তীরের মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর ওরেদু প্যালেস্টাইন পৃথক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

ফিলিস্তিনের যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র আনাদোলুকে বলেছে, গাজা উপত্যকা থেকে হঠাৎ করে পরিসেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে এর কারণ এখনো জানা যায়নি।

এদিকে ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানিয়েছে, গাজার পরিচালনা কক্ষ এবং সেখানে কর্মরত কর্মীদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করতে পারছে না। এ কারণে আহতদের দৌরগোড়ায় অ্যাম্বুলেন্সে সেবা পৌঁছানো নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

গাজায় তৎপরতা বাড়াচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী, বোমা হামলা জোরদার

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গতকাল শুক্রবার রাতে বোমা হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। বোমা হামলা জোরদারের পাশাপাশি সেখানে স্থল অভিযান সম্প্রসারণ করছে তারা। শনিবার (২৭ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে টাইমস অব ইসরায়েল।

একদিকে গাজার ভেতরে ইসরায়েলি পদাতিক বাহিনীর সঙ্গে হামাসের বড় ধরনের গোলাগুলির খবর শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে গাজায় ইন্টারনেট ও মোবাইল সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আইডিএফের মুখপাত্র রিয়ার অ্যাড. ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, হামাসের টানেল নিশানা করে বিমানবাহিনী উল্লেখযোগ্য হারে হামলা চালিয়েছে। সম্প্রতি আমরা যে হামলা চালিয়েছি তার পাশাপাশি পদাতিক বাহিনী আজ সন্ধ্যায় তাদের তৎপরতা বাড়াচ্ছে। যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছে আইডিএফ।

গত দুদিন ধরে যুদ্ধট্যাংক নিয়ে ইসরায়েলি পদাতিক বাহিনী গাজা উপত্যকায় সীমিতভাবে অভিযান পরিচালনা করেছে।

এদিকে হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসেম ব্রিগেডস বলেছে, গাজায় তারা ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছে। উত্তর গাজায় দুপক্ষের মধ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়েছে। তবে বেশ কয়েক দিন ধরে অবরুদ্ধ গাজায় যে স্থল অভিযান পরিচালনার কথা ইসরায়েল বলে আসছে তা এখনো শুরু হয়নি জানিয়েছেন মার্কিন ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা।

এক আমেরিকান কর্মকর্তা এবিসি নিউজকে বলেছেন, শুক্রবারের ইসরায়েলি অভিযান সীমিত আকারের। আইডিএফের মুখপাত্র পিটার লার্নারও এমনটাই বলেছেন। তিনি বলেন, হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর থেকে যে বড় ধরনের স্থল অভিযানের কথা বলা হচ্ছে সেটি গতকাল শুরু হয়নি।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। সে দিন ইসরায়েলি হামলা চালিয়ে ১৪০০ জনের বেশি ইসরায়েলিকে হত্যার পাশাপাশি দুই শতাধিক ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে গাজায় জিম্মি করে নিয়ে আসে সংগঠনটি। হামাসের হামলার জবাবে ওই দিনই গাজায় পাল্টা বোমা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ইসরায়েলি নির্বিচারে বোমা হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় সাত হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এরই মধ্যেই এবার সেখানে বড় ধরনের স্থল অভিযান চালাতে বেশ কয়েক দিন ধরে গাজা সীমান্তে হাজার হাজার সেনা ও রসদ জড়ো করেছে ইসরায়েল।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

Most Popular

Recent Comments