হারের বৃত্ত থেকে বের হতে পারল না বাংলাদেশ। নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচে ডাচদের বিপক্ষে ৮৭ রানের লজ্জার হার নিয়ে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ। নেদারল্যান্ডসের দেওয়া ২৩০ রানের ‘সহজ’ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৪২ রানেই গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশ। নিজেদের খেলা ছয় ম্যাচের মধ্যে শুধু আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
শনিবার (২৮ অক্টোবর) কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ২৩০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দলীয় ১৯ রানেই সাজঘরে ফিরে যান ওপেনার লিটন দাস ও তানজিদ হাসান তামিম। ইনিংসের ৪ দশমিক ২ ওভারে আরিয়ানের শিকার হয়ে ফেরার আগে লিটন করেন ১২ বলে মাত্র ৩ রান।
ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো শুরুর আভাস দিয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি আরেক ওপেনার তানজিদ। ১৬ বলে ৩ চারে ১৫ করা তানজিদও ফিরে যান দলের ১৯ রানে।
যথারীতি হতাশ করেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ১৮ বলে মাত্র ৯ রান করে ম্যাকেরেনের শিকার হয়ে ফেরেন শান্ত। ৪৫ রানেই ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
আশা জাগাতে ক্রিজে আসেন অধিনায়ক সাকিব। তবে এই ম্যাচেও হাসেনি তার ব্যাট। উইকেটরক্ষক এডওয়ার্সের হাতে ম্যাকেরেনের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে সাকিব করেন মাত্র ৫ রান। বল খেলেন ১৪টি। এদিন তিনে ব্যাটে নেমে দারুণ শুরু করেন মিরাজ। তবে ব্যক্তিগত ৩৫ রানে ডি লিডের বলে তিনিও উইকেটরক্ষককে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। ৪০ বলের মোকাবিলায় তিনি একটি ছক্কা ও ৫টি চার মারেন।
মিরাজের বিদায়ে ৬৯ রানেই ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মুশফিকের কাঁধে দায়িত্ব পড়ে দলের হার ধরার। তবে তিনিও ব্যর্থ। ম্যাকেরেনের বলে মাত্র ১ রানে বোল্ড হয়ে মুশফিক ফিরলে ৭০ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে অনেকটা পরাজয় স্বীকার করে নেয় বাংলাদেশ।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং মেহেদী হাসানের রানের জুটি পরাজয়ের ব্যবধান কমালেও জয় এনে দিতে পারেনি বাংলাদেশকে। এই জুটিতে আসে ৩৮ রান। মেহেদী ৩৮ বলে ১৭ রান করে ডি লিডের সরাসরি থ্রোতে রানআউট হয়ে ফেরেন। পরে ডি লিডের বলে শর্টে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে মাহমুদউল্লাহ করেন ২০ রান। শেষদিকে মোস্তাফিজের ২০ রানে ব্যবধান আরও কিছুটা কমায় বাংলাদেশ।
নেদারল্যান্ডসের পেসার বোলার ম্যাকেরেন ২৩ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট। এছাড়া ডি লিড দুইটি এবং আরিয়ান ও ভ্যান বিক একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে, টসে হেরে ফিল্ডিংয়ে নামে বাংলাদেশ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ডাচ ওপেনার বিক্রমজিৎকে সাজঘরে ফেরান তাসকিন। সাকিব আল হাসানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে বিক্রমজিৎ করেন ৩ রান। তাকসিনের আঘাতের পরের ওভারের প্রথম বলেই ম্যাক্স ও’ডাউডকে ফেরান শরীফুল। রানের খাতা খোলার আগেই তানজিদ তামিমের ক্যাচে পরিণত হন ও’ডাউড। ৪ রানে ২ উইকেট তুলে নিয়ে ডাচদের চেপে ধরে বাংলাদেশ।
এরপর হাল ধরেন বারেসি। তাকে সঙ্গ দেন কোলিন অ্যাকারম্যান। বারেসি-অ্যাকারম্যান জুটি ৬৮ বলে ৫৯ রান তোলে। তবে অর্ধশতকের দিকে আগানো বারেসিকে ব্যক্তিগত ৪১ রানে ফেরান মোস্তাফিজ।
পরের ওভারে ডাচ শিবিরে আঘাত হানেন অধিনায়ক সাকিব। তার বলে মোস্তাফিজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রানের জন্য ভুগতে থাকা অ্যাকারম্যান। তিনি ৩৩ বলের মোকাবিলায় ১৫ রান করেন। ৬৩ রানে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে ডাচদের আবার চেপে ধরেন সাকিব-মোস্তাফিজরা।
নতুন ব্যাটার বাস ডি লিডকে নিয়ে সেই চাপ কিছুটা সামাল দেন অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্স। এই জুটিতে ভর করে ২৫ দশমিক ২ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে দলীয় ১০০ রান পূর্ণ করে ডাচরা। তবে এর পরই ডাচ শিবিরে আবার আঘাত আনেন তাসকিন। তিনি ফেরান ১৭ রান করা ডি লিডকে।
পরে সাইব্র্যান্ড এনজেলব্রাখকে নিয়ে আবার জুটি গড়েন অধিনায়ক এডওয়ার্স। তিনি একপ্রান্তে দলের হাল ধরে ৭৮ বলে ৩ চারে তুলে নেন অর্ধশতক। নিজের মাইলফক ছোঁয়ার পর দ্রুত রান তুলতে থাকেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৮৯ বলে ৬৮ রান করে মোস্তাফিজের দ্বিতীয় শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে সাইব্র্যান্ডের সঙ্গে গড়েন ৭৮ রানের জুটি। পরের ওভারে সাইব্র্যান্ডকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন শেখ মেহেদী। ফেরার আগে তিনি ৬১ বলে ৩৫ রান করেন।
এরপর শারিজ আহমাদ রান আউট হয়ে ফিরলে ১৯৪ রানেই ৮ উইকেট হারায় নেদারল্যান্ডস। দলীয় ২১২ রানে শরীফুলের দ্বিতীয় শিকার হন আরিয়ান। তবে ইনিংসের শেষ বলে মেহেদীর বলে এলবিডব্লিউয়ে কাটা পড়েন ম্যাকেরেন। অলআউট হয়ে নেদারল্যান্ডস। ভ্যান বিক ১৬ বলে ২৩ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের পক্ষে মোস্তাফিজ-তাসকিন-মেহেদী-শরীফুল দুটি করে উইকেট শিকার করেন। আর সাকিব নেন এক উইকেট।