সোমবার (৩০ অক্টোবর) ‘ডিপিআই অ্যান্ড এআই ফর জিরো ডিজিটাল ডিভাইড’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়েছে। এদিন রাজধানীর একটি হোটেলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগিতায় ও এসপায়ার টু ইনোভেট-এটুআইয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। এসময় এ তথ্য জানান তিনি।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন,
এখনও প্রতি পাঁচজনে একজন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এই হিসাবে দেশের সাড়ে ৩ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন।
তিনি আরও বলেন, অনেক মানুষ শিক্ষা পাচ্ছেন না, চিকিৎসা পাচ্ছেন না, মাথার ওপর ছাদ নেই। স্বাধীনতা পাওয়াটাই যথেষ্ট নয়। মৌলিক অধিকারের জন্য এখনও আমরা যুদ্ধ করে যাচ্ছি।
আধুনিক প্রযুক্তি উৎপাদন বাড়িয়ে দেয় উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এখন আমাদের আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োজন। দেশের সর্বত্র প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগানোর জন্য কাজ করে যেতে হবে। পাবলিক প্রাইভেট মিলিয়ে দেশে ২৫০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এরইমধ্যে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে।
মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে এখন যে যুদ্ধ হচ্ছে এর পেছনে কারণ আছে। কিন্তু আমাদের এখানে কী নিয়ে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে? আমাদের দেশে রাজধানীর বুকে মানুষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হচ্ছে। শিক্ষিত মানুষের থেকে এটি আসা করা যায় না। এটি মধ্যযুগীয় গ্রাম্য কায়দা-কানুন।’
ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য এখন স্থিতিশীল পরিবেশ দরকার উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এটি নিশ্চিত করতে না পারলে বাংলাদেশ উচ্ছৃঙ্খল জাতি হিসেবে পরিচিতি পাবে। এটি কোনোভাবেই হতে দেয়া যাবে না।
সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে আটটি সেশনের আয়োজন করা হয়। স্মার্ট রাষ্ট্র বিনির্মাণে ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাসটাকচার (ডিপিআই )কীভাবে অবদান রাখতে পারে, সে বিষয়ে আলোকপাত করা হয় এসব সেশনে। এতে আলোচকরা ডিজিটাল ইকোনমিতে ডিপিআইয়ের গুরুত্ব বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। এ ছাড়া ওপেন প্লাটফর্মের মাধ্যমে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জুডিশিয়ারি, ফিনটেক প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি শেয়ার, পলিসি, সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং বহুপাক্ষিক ও বৈশ্বিক সমস্যার সমাধানে প্ল্যাটফর্ম তৈরির বিষয়ে আলোচনা হয়।
প্রথম সেশনে আন্তঃদেশীয় ই-কমার্স খাত সম্প্রসারণে ডিপিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
দ্বিতীয় সেশনে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও সাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে ডিপিআই কীভাবে অবদান রেখে চলেছে এবং রাখবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়।
তৃতীয় সেশনের বিষয় ছিল ডিপিআই ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে নাগরিকদের কাছে সরকারি সেবা পৌঁছে দেয়ার উপায়।
চতুর্থ সেশনে ডিপিআইয়ের মাধ্যমে কীভাবে সমৃদ্ধ আগামীর শিক্ষা নিশ্চিত করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করা হয় ।
পঞ্চম সেশনে ডিজিটাল স্বাস্থ্য বাস্তবায়নে কী কী উদ্ভাবন হয়েছে এবং ডিপিআইয়ের মাধ্যমে স্মার্ট স্বাস্থ্য বাস্তবায়নে কীভাবে ভূমিকা পালন করতে পারে, সে বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
ষষ্ঠ সেশনে আলোচনার বিষয় ছিল টেকসই বিশ্ব গঠনে ডিপিআইয়ের ভূমিকা। এছাড়া সবুজায়ন ও টেকসই বিশ্ব তৈরিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন, বণ্টন এবং ভোগের নকশা উন্নয়নে ডিপিআই কীভাবে অবদান রাখছে এবং রাখবে সে বিষয়েও আলোচনা করা হয়।
সপ্তম সেশনে নারীর নেতৃত্ব দক্ষতা বাড়িয়ে ডিজিটাল বৈষম্য কমিয়ে আনতে ডিপিআই কীভাবে রাখতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়। দিনের শেষ সেশনে ডিপিআই ব্যবস্থার মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে কীভাবে ডিজিটাল বৈষম্য কমিয়ে এনে অন্তর্ভুক্তিকরণ অভিগম্যতা আনা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৮তম অধিবেশনের সাইড ইভেন্টে ডিজিটাল বৈষম্যহীন বিশ্ব গড়তে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সর্বোত্তম ব্যবহার করে ডিপিআই নির্মাণের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়। এর পটভূমিতে বৈশ্বিক গুরুত্বের ওপর ভিত্তি করে এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে।
সূত্রঃ সময় নিউজ