গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে যা ঘটেছিলো, তা ধামাচাপা দিতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যাচার করেছেন বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
বিএনপির পক্ষে এক ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে, দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী (২৮ অক্টোবরের সহিংসতা নিয়ে) যা বলেছেন, তা ছিলো মিথ্যার অপ্রতিরোধ্য স্রোত। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, ২৮ অক্টোবর যা ঘটেছে তার সব ভিডিও ধারণ করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রযুক্তির এই যুগে কোনো ঘটনাই এখন রেকর্ডের বাইরে নেই, অনথিভুক্ত বা মানুষের দৃষ্টির বাইরেও থাকে না। আপনি (প্রধানমন্ত্রী) পুলিশি সুরক্ষায় বিভিন্ন মিথ্যা বলতে পারেন, কিন্তু আপনি সত্য ঢাকতে পারবেন না।”
মিথ্যাচার, নাটকীয়তা ও ভিডিও তৈরি করে সরকার সত্যকে ধামাচাপা দিতে পারবে না বলে উল্লেখ করেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, “আমি সরকারকে বলতে চাই, সব তথ্য এখন পাওয়া যাচ্ছে।” তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বহনকারী বাস ও ট্রাক গুলো সেখানে (কাকরাইল) গেলো কীভাবে? সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি এবং বিএনপির মহাসমাবেশ বানচাল করার জন্য এটা করেছে।”
তিনি বলেন, “যে সব ভিডিও পাওয়া যাচ্ছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, কিছু লোক পুলিশের পাহারায় প্রধান বিচারপতির বাসভবনের প্রধান ফটক ও অন্যান্য স্থাপনা ভাংচুর করছে। প্রধানমন্ত্রী কি এটা জানতেন না? এর ভিডিও এবং অন্যান্য প্রমাণ রয়েছে। আপনি জোর করে অনবরত মিথ্যা বলতে পারেন; কিন্তু আপনি সত্য লুকাতে পারবেন না। সমস্ত ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে এবং সত্য উন্মোচিত হচ্ছে। সুতরাং, আপনার সত্য অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই।”
রুহুল কবির রিজভী বলেন, “সরকার হয়তো হুমকি দিয়ে জনগণকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ছেড়ে দিতে পারে। কিন্তু, সবাইকে ভয় দেখাতে বা চুপ করিয়ে দিতে পারবে না।”
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “আজ (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের সামনে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন কীভাবে বাস চালককে ব্যবহার করে বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়, তার একটি ভিডিও পাওয়া গেছে।”
এদিকে, হিংসতার মাধ্যমে বিএনপি আগামী জাতীয় নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
আরো বলেন, ২০১৩ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন তারা ঠেকাতে পারেনি। এবারও তারা তা করতে পারবে না। যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার তার বেলজিয়াম সফর নিয়ে, গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “যারা বাস পুড়িয়েছে তাদের চিহ্নিত করা হবে, গ্রেপ্তার করা হবে এবং শাস্তি দেয়া হবে।” এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি মনে করি বাসে আগুন দেয়ার জন্য তারা যে হাত ব্যবহার করে; তা অবিলম্বে পুড়িয়ে ফেলা উচিত। যদি তাই হয়, তাহলে তারা শিক্ষা পাবে, নইলে অন্য কিছু হবে।” তিনি আশা প্রকাশ করেন যে বিএনপি সহিংসতা বন্ধ করবে।“যদি তারা থেমে না যায়, তাহলে তারা এর পরিণতি ভোগ করবে। এই বিষয়গুলোতে শাস্তি না দিয়ে চলতে দেয়া হবে না।”
অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “গত ২৮ অক্টোবর সহিংসতার মাধ্যমে বিএনপি আবার প্রমাণ করেছে যে তারা সন্ত্রাসী দল। বিএনপি-জামায়াত জোট সন্ত্রাসী।”
সরকার তাদের কর্মসূচিতে বাধা দেয়নি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপি ধীরে ধীরে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস ফিরে পেতে শুরু করেছিলো; তারা (সাম্প্রতিক দিনগুলোতে) সুস্থভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছিলো। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের ঘটনার পর তারা জনগণের ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই পাবে না।”
“আমি মনে করি তারা নির্বাচন চায় না, তারা একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়;” বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।