বলিভিয়া ছাড়াও দক্ষিণ আমেরিকার আরও দুটি দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে। ইতিমধ্যে কূটনীতিকদের প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল বাহিনীর যুদ্ধাপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে গতকাল মঙ্গলবার ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয় বলিভিয়ার বামপন্থী সরকার। দেশটির প্রেসেডিন্ট লুইস আর্সের প্রশাসনের মন্ত্রী মারিয়া নেলা প্রাদা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘গাজায় হামলা চালিয়ে হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ মেরে ফেলছে ইসরায়েলি সেনারা। লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে জোর করে বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে। আমরা এ হামলা বন্ধের জোর দাবি জানাই।’
বলিভিয়ার এ ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই চিলি ও কলম্বিয়ার সরকার ইসরায়েল থেকে তাদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। প্রায় একই সময়ে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টও গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত বিমান হামলার নিন্দা জানান।
বলিভিয়ার উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রেডি মামানি মাচাকা বলেন, আমরা এ সিন্ধান্তের মাধ্যমে গাজায় ইসরায়েলের অযাচিত হামলার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কারণ ইসরায়েল আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করছে।
এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (আগের নাম টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে বলিভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস বলেন, ‘ফিলিস্তিনি জনগণ ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। তাদের এমন পরিস্থতির মধ্যে ফেলার জন্য ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত।’ তিনি ইসরায়েলকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবেও উল্লেখ করেন। তাঁর এ মন্তব্যের পরই বলিভিয়া সরকার ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পদক্ষেপ নেয়।
এর আগেও ২০০৯ সালে ইসরায়েল যখন গাজায় হামলা চালিয়েছিল, তখনও সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল বলিভিয়া। পরে ২০২০ প্রেসিডেন্ট জিনাইন অ্যানেজ ক্ষমতা গ্রহণের পর ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার কলম্বিয়ার বামপন্থী প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো বলেন, ‘গাজায় ইসরায়েল বাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদে আমরা রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বোরিক বলেন, আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করার প্রতিবাদে তেল আবিব থেকে চিলির রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া গত সপ্তাহে লাতিন আমেরিকার আরেক দেশ ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভাও ইসরায়েলের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের উন্মাদ প্রধানমন্ত্রী গাজা উপত্যকাকে প্রায় ধ্বংস করে ফেলেছেন। কিন্তু তিনি ভুলে গেছেন যে সেখানে শুধু হামাস যোদ্ধারাই থাকে না, নারী ও শিশুরাও রয়েছে।’
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গত ২৪ দিন ধরে সংঘাত চলছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ দিনের সংঘাতে ৮ হাজার ৫২৫জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি শিশু রয়েছে। গত ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল।