ইসরায়েলের বয়স যত ৮০ বছরের কাছাকাছি হচ্ছে, ততই ‘অষ্টম দশকের অভিশাপ’বাক্যটি ডালপালা মেলছে। তাহলে কি ২০২৮ সালেই ধ্বংস হবে ইসরায়েল?
ইসরায়েল–হামাস যুদ্ধের এই ডামাডোলের মধ্যে শুধু ফিলিস্তিনিদের মুখেই শব্দবন্ধটি শোনা যাচ্ছে তা নয়, বরং বহু ইসরায়েলি নেতার মুখেও এখন বাক্যটি নতুন করে প্রাণ পেয়েছে।কিন্তু কী এই ‘অষ্টম দশকের অভিশাপ’? কেনই বা তা নিয়ে এত আলোচনা।
লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এলবিসি নিউজ বলছে, অষ্টম দশকের অভিশাপ নতুন কিছু নয়। আজ থেকে ২৪ বছর আগে হামাস আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ ইয়াসিন এই শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। সহজ কথায়, অষ্টম দশকের অভিশাপ হচ্ছে ইসরায়েলিদের এমন একটি বিশ্বাস, যে বিশ্বাস বলে, কোনো ইহুদি রাষ্ট্রের আয়ুষ্কাল ৮০ বছরের বেশি হবে না। এই বিশ্বাস তাঁরা কোথায় থেকে পেয়েছেন? ইহুদিরা এই বিশ্বাস পেয়েছেন ‘তালমুদ’ থেকে। তালমুদ হচ্ছে ইহুদিদের একটি ধর্মীয় ন্যায়শাস্ত্র। এটি প্রাচীন ইহুদি পণ্ডিতেরা লিখেছিলেন। শাস্ত্রটিতে ইহুদিদের প্রাত্যহিক জীবনের করণীয়, পালনীয় ও পরিত্যাজ্য বিষয়গুলোকে বাতলে দেওয়া হয়েছে।
তবে এটি কোনোভাবেই ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ ‘তওরাত’ নয়। যাইহোক, তালমুদে বলা হয়েছে, ‘কোনো ইহুদি রাষ্ট্রই আট দশকের বেশি টিকবে না। নিজেদের জাতিগত অন্তর্কোন্দলের কারণেই রাষ্ট্রটি ভেঙে যাবে।’
বাস্তবেও কি তাই ঘটেছে? মিলে গেছে তালমুদের ভবিষ্যদ্বাণী? একটু ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকানো যাক। ইতিহাস বলছে, গত দুই হাজার বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছোট বড় অনেক ইহুদি রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু কিং ডেভিডের রাজত্ব আর হাসমোনিয়ান রাজত্ব ছাড়া আজ পর্যন্ত কোনো ইহুদি রাজ্য ৮০ বছরের বেশি টেকেনি। কিং ডেভিডের রাজত্বকাল ছিল খ্রিস্টপূর্বাব্দ ১০৫০ থেকে ৯৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত। আর হাসমোনিয়ানের রাজত্ব ছিল খ্রিস্টপূর্ব ১৪০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৬৭ পর্যন্ত।
ইতিহাসবিদেরা বলছেন, কিং ডেভিডের রাজত্ব ও হাসমোনিয়ান রাজত্ব ৮০ বছরের বেশি টিকে থাকলেও রাজ্য দুটিতে ভাঙনের সুর বেজে উঠেছিল ঠিক ৮০ বছরের মাথায়। তারপর ধীরে ধীরে রাজ্য দুটি ধ্বংস হয়ে গেছে।
ইসরায়েলের ললাটলিখনও কী এমন হবে? কারণ আধুনিক এ ইহুদি রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৪৮ সালে ১৪ মে। সেই হিসেবে ২০২৮ সালে ৮০ বছর পূর্ণ করবে ইসরায়েল। তার মানে, হাতে আছে আর মাত্র পাঁচ বছর। চার কিংবা পাঁচ বছর পরই হয়তো বেজে উঠবে ইসরায়েলের চূড়ান্ত মৃত্যুঘণ্টা।
এখনই সেই মৃত্যুঘণ্টার ধ্বণি শুনতে পাচ্ছেন অনেক বিশ্লেষক। তাঁরা বলছেন, গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজার ওপর যেভাবে মরিয়া হয়ে বোমাবর্ষণ শুরু করেছে ইসরায়েল, যেভাবে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের নিশ্চিহ্ন করতে উন্মাদের মতো আচরণ করছেন নেতানিয়াহু, তাতে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, ইহুদিরা ভেতরে ভেতরে অস্তিত্ব সঙ্কটে ভুগছে। তাই শেষবারের মতো মরণকামড় দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।
মিডল ইস্ট মনিটর এক প্রতিবেদনে বলেছে, ইহুদিরা যে অষ্টম দশকের অভিশাপ নিয়ে ভীত, তা সাম্প্রতিক সময়ে ইহুদি নেতা এহুদ বারাক, নাফতালি বেনেট ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বক্তব্যেই স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে।
গত বছর ইসরায়েলের ইয়েদিয়াত আহরোনত পত্রিকায় এক নিবন্ধে সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী এহুদ রাবাক লিখেছেন, ইসরায়েল সমাজে বিভাজন ও বিভেদ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। এটি কার্স অব এইট্টি ডিকেডস তথা অষ্টম শতকের অভিশাপকেই মনে করিয়ে দেয়।
এদিকে চলতি মেয়াদে প্রধানমন্ত্রিত্ব নেওয়ার আগে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ‘ইসরায়েলকে আট দশকের অভিশাপ থেকে মুক্তি দেওয়ার নিশ্চয়তা কেবল তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারই দিতে পারে।’ এর আগের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটও তাঁর নির্বাচনী প্রচারণার সময় বলেছিলেন, ‘একমাত্র তাঁর সরকারই অষ্টম দশকের অভিশাপকে মিথ্যা প্রমাণ করে দিতে পারে।’
এসব বক্তব্য থেকে স্পষ্টই অনুমান করা যায় যে ইসরায়েলি নেতার অষ্টম শতকের অভিশাপ বিষয়টি নিয়ে শঙ্কিত। এখন সত্যি সত্যি অষ্টম শতকের অভিশাপ ফলে যায় কি না, তা দেখার জন্য ২০২৮ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।
তথ্যসূত্র: এলবিসি নিউজ, মিডল ইস্ট মনিটর, লেবাননের আল মানার টিভি ও তেহরান টাইমস