সৌদি আরবে মক্কায় অবস্থিত পবিত্র কাবা শরীফ ও এর আশপাশে কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাত হওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে। বৃষ্টির প্রভাবে মরুভূমির পাহাড়ে সবুজ গাছপালা বেড়ে উঠেছে। দেশটির মরুভূমির ধূসর পাহাড়গুলো সবুজ হয়ে গেছে। সবুজ গাছ, ঘাস ও লতাপাতায় ছেয়ে গেছে মরুর পাহাড়। গেলো কয়েকদিনের বৃষ্টিতে নতুন করে এই পরিস্হিতির সৃষ্টি হয়েছে।
সৌদি আরবে অর্থাৎ মক্কা-মদিনার পাহাড়-পর্বতের অবিশ্বাস্য এসব ছবি নজিরবিহীন। সৌদি আরবের ন্যাশনাল সেন্টার অব মেটিওরোলজি (এনসিএম) জানিয়েছে, দেশটির বেশির ভাগ অঞ্চলে বৃষ্টি হওয়ার পর এমন হয়েছে। যা আগে কখনো কল্পনাও করা যায়নি, ঠিক তাই ঘটছে সৌদিতে।
এদিকে এসব এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে গাছপালা বাড়তে শুরু করলেও মরুময় দেশটিকে সবুজে ভরিয়ে তোলার উদ্যোগ আরো আগেই নিয়েছিল সৌদি সরকার। এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প শুরু করেছে তারা। এর একটি হলো গ্রিন রিয়াদ প্রকল্প। বিশ্বব্যাপী পরিবেশগত মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে ও স্থানীয় পরিবেশ বিবেচনায় এ প্রকল্পের নকশা করা হয়েছে। এর আওতায় সৌদির রাজধানীতে ১২০টির বেশি আবাসিক এলাকায় বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে সবুজায়ন করা হবে।
গ্রিন রিয়াদ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে আবাসিক এলাকায় পার্ক নির্মাণ, রাস্তা, ফুটপাতের পাশে গাছ লাগানো, মসজিদ ও স্কুলের চারপাশে গাছ লাগানো, পার্কিং লটে গাছ লাগানো, বড় পার্ক নির্মাণ এবং উপত্যকা এলাকাগুলোতে গাছ লাগানো। এ প্রকল্পে রিয়াদ জুড়ে অন্তত ৭৫ লাখ গাছ লাগানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
গ্রিন রিয়াদ প্রকল্পে আগামী ১০ বছরে ১ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলার খরচ করবে সৌদি সরকার। এর মাধ্যমে ৩ হাজার ৩০০টি নতুন পার্ক ও বাগান তৈরি করা হবে। এটি ঐ অঞ্চলের বাতাসের মান বাড়াতে এবং তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে সৌদি আরবে সবুজায়নের সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি হলো সৌদি গ্রিন ইনিশিয়েটিভ (এসজিআই)। এর আওতায় দেশব্যাপী ১ হাজার কোটি গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ২০২১ সালে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এ প্রকল্পের সূচনা করেন। সেই থেকে প্রকল্পটির আওতায় সৌদি আরব জুড়ে ১ কোটি ৮০ লাখের বেশি গাছ লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে ১ কোটি ৩০ লাখ গাছই লাগানো হয়েছে ম্যানগ্রোভ অঞ্চলগুলোতে।
এছাড়া এক বছরে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে ৬০ হাজার হেক্টর বনাঞ্চল। এসজিআইর পরিকল্পনা অনুসারে, সৌদি আরবে ২০৩০ সালের মধ্যে অন্তত ৬৫ কোটি গাছ লাগানো হবে। উদ্ধার করা হবে অন্তত ৮০ লাখ হেক্টর বনাঞ্চল। এর ফলে প্রতি বছর ২০ কোটি টন কার্বন নিঃসরণ কমানো সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুষ্ক মরুভূমি সবুজ রঙে বদলে যাওয়া বেশ আলোড়ন তুলেছে। বিরল এই দৃশ্য বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে অনেকের মাঝে। স্থানীয়রাও উপভোগ করছেন প্রকৃতির এই পরিবর্তন। বিস্তীর্ণ জায়গাজুড়ে গাছপালা জন্মানোর ঘটনাকে ঐতিহাসিক ও বিরল বলছেন বিশ্লেষকরা। জানিয়েছেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাবেই মরু অঞ্চলের এমন পরিবর্তন।
অনেকে আবার ছবি শেয়ার করে কেয়ামতের আলামত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কারণ হাদিসের আলোকে কিয়ামতের যেসব আলামত ভবিষ্যতে ঘটিত হবে এর মধ্যে একটি আরব ভূমি ঝর্ণা ও সবুজ ঘাসে পূর্ণ হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
হযরত আবূ হূরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত- রসূলু (সাঃ) বলেছেনঃ কিয়ামাত অনুষ্ঠিত হবে না যে পর্যন্ত সম্পদের প্রাচুর্য না আসবে। এমনকি কোনো ব্যক্তি সম্পদের যাকাত নিয়ে ঘুরবে কিন্তু নেয়ার মত লোক পাবে না। আরবের মাঠ ঘাট তখন চারণভূমি ও নদী-নালায় পরিণত হবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২২২৯)