জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের স্বপ্ন নিয়ে জীবনের সবকিছু ত্যাগ করে অনেকেই কাতারে পাড়ি জমান। হয়তো কাতারে গেলেই তাদের জীবন বদলে যাবে। সেখানে তারা ভালো আয় করবেন, আরাম-আয়েশে জীবনযাপন করবেন। কিন্তু বাস্তবতা তার উল্টো।
মধ্যপ্রাচ্যের এই প্রবাসী কর্মীরা জানান, প্রায় তিন-চার মাস ধরে তারা কাতারে অবস্থান করছেন। কেউ ৩ লাখ, কেউবা ৫ লাখ টাকা খরচ করে কাতারে এসেছেন। কিন্তু প্রত্যাশা পূরণ হয়নি তাদের, কারো কারো চাকরি এখনো হয়নি, কারো চাকরি হলেও মিলছে না যথাযথ বেতন, কাউকে আবার চাকরি দিয়েও এক মাস পর বিনা বেতনে বের করে দেওয়া হচ্ছে। কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করলে কেউ আশ্বাস দেয়, কেউ আবারও ফোনই ধরে না।
সাকিল (ছদ্মনাম) নামের এক প্রবাসী বলেন, পরিচিত এক ভায়ের মাধ্যমে আমি কাতার আসি। আসার পর প্রথমে ভাইয়ের কাছেই ছিলাম। তখন দুই বেলা করে খাবার পেতাম। চাকরির কথা বললে আমাকে ধৈর্য ধরতে বলা হয়। এভাবে ৩ মাস ১০ দিন পর সেখান থাকার পর আমাকে এক বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন ১০০০ রিয়াল (বাংলাদেশি টাকায় ৩০ হাজার টাকা) দিয়ে বলে, এই টাকা দিয়েই চলতে হবে। আর কোনো টাকা-পয়সা দেওয়া হবে না। চাকরির কথা জানতে চাইলে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। আমি কি করব, কার সঙ্গে যোগাযোগ করব, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।
আরেক প্রবাসী রহিম মিয়া (ছদ্মনাম) বলেন, আমি কাতার এসেছি প্রায় ৪ বছর। এমন অবস্থা কখনো হয় নাই। কাতার বিশ্বকাপের পর থেকেই আমাদের এই অবস্থা। কাজ নেই, রুম ভাড়া দিতে পারি না, খাবার খরচের টাকাও নাই। এক প্রকার ধার দেনা করে চলতে হচ্ছে। মাঝেমধ্যে চুক্তিতে কিছু কাজ পেলেও মূল্য খুব কম।
তিনি আরও বলেন, আমি যে রুমে থাকি, সে রুমের কারো কাজ নাই। সবাই খুব বিপদে আছি। দেশে চলে যাবো, গিয়েই বা কি করবো। বিমানের টিকেট যে কাটবো, সে টাকাও তো নাই।
ভুক্তভোগী প্রবাসীরা বলছেন, সাহায্যের জন্য তারা কাতারে বাংলাদেশ এম্বাসিতে যোগাযোগ করলেও সেখান থেকেও কোনো সাড়া পাননি।
২০২২ সালের বিশ্বকাপের আয়োজনের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। এই কর্মসূচিতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ব্যাপক ভূমিকা ছিল। ২০২২ সালের বিশ্বকাপের আগে কাতারে প্রায় চার লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে কাতারে খুব একটা কাজ না থাকায় কর্মহীন ও দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এসব প্রবাসীরা।