অযোধ্যা শহরে হিন্দু জনতাদের ধ্বংস করে দেওয়া বাবরি মসজিদের জায়গায় হিন্দু দেবতা রামের নামে নির্মাণ করা হয়েছে রাম মন্দির। সোমবার (২২ জানুয়ারি) মন্দিরটি উদ্বোধন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
রামমন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতি ছিলেন দেশ-বিদেশের অতিথিরা- যাদের মধ্যে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে শিল্পপতি, খেলা ও চিত্রজগতের তারকারাও ছিলেন। যদিও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি অংশ এবং বিরোধী দলগুলোর নেতাদের প্রায় সবাই এই অনুষ্ঠান বয়কট করেছেন এই অভিযোগ তুলে যে মি. মোদী রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার জন্য একে ব্যবহার করছেন।
মোদির রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা বলছেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ভারতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তাই ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এমন একটি দেশে এই মন্দিরের নামে ভোট চাইবে, যেখানে মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ হিন্দু।অনেক হিন্দু বিশ্বাস করেন, অযোধ্যা হলো রামের জন্মস্থান। এ দেবতার জন্মস্থানে একটি রাম মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের ওপর মুসলিম আক্রমণকারীরা তৈরি করেছিল। একই স্থানে একটি মন্দির নির্মাণের আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বিজেপি ১৯৯০-এর দশকে রাজনৈতিকভাবে ভারতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।
১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে ভূমির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘ আইনি লড়াই চলেছে। অবশেষে ২০১৯ সালে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট বিতর্কিত ওই জমির মালিকানা হিন্দুদের প্রদান করেন এবং মসজিদ নির্মাণের জন্য মুসলিমদেরকে শহরের বাইরে একটি জমি দেওয়া হয় ।
২১৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত নতুন তিনতলা রাম মন্দিরটি গোলাপি বেলেপাথর এবং কালো গ্রানাইট পাথর দিয়ে তৈরি। এটি ৭০ একর কমপ্লেক্সের ৭ দশমিক ২ একর জায়গা নিয়ে বিস্তৃত। মন্দিরের শুধু নিচতলা উদ্বোধন করবেন মোদি। বাকি অংশগুলো নির্মাণের কাজ বছরের শেষ নাগাদ সমাপ্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।বড় জনসমাগম এড়াতে তীর্থযাত্রীদের অযোধ্যায় বেশি সংখ্যায় না এসে টেলিভিশনে অনুষ্ঠানটি সরাসরি দেখার জন্য আহ্বান করেছেন মোদি। এর জন্য বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোর স্কুল এবং কলেজগুলো বন্ধ ঘোষণা করার পাশাপাশি এবং পূর্ণ বা অর্ধ দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
মোদি মানুষকে প্রদীপ জ্বালাতে বলেছেন এবং বিজেপির সমর্থকরা দিল্লির বেশ কয়েকটি এলাকাসহ দেশের অনেক জায়গায় বাড়ির ছাদে রামের ছবিসহ জাফরান রঙের পতাকা টাঙিয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালে হিন্দু জনতা ধ্বংস করে দেয় ১৬ শতকের বাবরি মসজিদ। মসজিদ ধ্বংসের ফলে দেশব্যাপী দাঙ্গা শুরু হয়। সেই দাঙ্গায় প্রাণ হারান প্রায় ২ হাজার মানুষ। সেই মসজিদের জায়গায় নির্মাণ হলো রাম মন্দির।